অ্যাকুরিয়ামে অক্সিজেন বাড়ানোর সহজ এবং কার্যকর টিপস

অক্সিজেনের স্তর সাধারণত তখন সমস্যা সৃষ্টি করে না যখন অ্যাকুরিয়ামের ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এবং ট্যাংকের তুলনায় অতিরিক্ত মাছ না থাকে। তবে, যদি মাছগুলো পানিতে গ্যাস বা কোন টক্সিন সৃষ্টি করে থাকে, তবে সেই মুহুর্তে আপনার আরোও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং পানির ট্যাংকটি ভালোভাবে যাচাই বাছাই করতে হবে। 

একটি অক্সিজেনহীন ট্যাঙ্কে মাছ এক দিনের বেশি বাঁচতে পারে না। এখানে কী কী লক্ষণ দেখতে হবে এবং অক্সিজেনের মাত্রা কম এই সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করবেন তা নিয়ে কিছু টিপসঃ 

মাছের জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা

একটি মাছের ট্যাঙ্কে অপ্টিমাল অক্সিজেনের পরিমাণ মাছের প্রজাতি এবং আপনার বাড়ির অবস্থানের বায়ুমণ্ডলীয় চাপের উপর নির্ভর করে (যত বেশি উচ্চতা, তত কম অক্সিজেন পানি ধারণ করতে পারে)।

সৌভাগ্যবশত, আপনাকে এই পরামিতি গুলির ভিত্তিতে সঠিক পরিমাণ গণনা করতে হবে না। যদি আপনার মাছগুলো সতেজ দেখায় এবং কোন মাছ পানির উপরের থেকে বাতাস গিলে নিচ্ছে না, তবে আপনার ট্যাঙ্কের অক্সিজেনের স্তর যথেষ্ট।

যদি আপনি আপনার  অ্যাকুরিয়ামের দ্রবীভূত অক্সিজেনের সঠিক পরিমাণ মাপতে চান, তবে একটি পোর্টেবল দ্রবীভূত অক্সিজেন মিটার কিনুন। সকল মিষ্টি পানির মাছের জন্য সাধারণত নিরাপদ অক্সিজেন স্তর হল ৮.৩ ppm।

নিম্ন অক্সিজেনের লক্ষণ

দুর্ভাগ্যবশত,  অ্যাকুরিয়ামের দ্রবীভূত অক্সিজেনের স্তর খুব কম হলে সিগন্যাল দেওয়ার জন্য কোনও আলোর চিহ্ন বা অ্যালার্ম নেই। শুধুমাত্র দ্রবীভূত অক্সিজেন পরীক্ষা করার পাশাপাশি, সমস্যা সনাক্ত করার একমাত্র নির্দেশক হল আপনার মাছের আচরণ।

মাছগুলি প্রথমে নিম্ন অক্সিজেন স্তরে কম চলাফেরা করে। তারা কম উচ্ছলভাবে সাঁতার কাটবে এবং এমনকি খাবারও কম খাবে। অক্সিজেনের স্তর আরও কমে গেলে, মাছগুলি শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট পেতে শুরু করবে এবং তাদের শরীর গুলো দ্রুতগতিতে চলতে থাকবে যেন তারা পানির মাধ্যমে আরও অক্সিজেন পেতে পারে।

নিম্ন অক্সিজেনের ৬টি কারণ এবং এর সমাধান

যদি আপনার মাছ উপরে এসে গ্যাস্পিং করে, তবে দ্রুত পদক্ষেপ নিন অক্সিজেন বাড়ানোর জন্য:

পানি পরিবর্তন করুন (ট্যাঙ্কের ভলিউমের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত)। তারপর, পানির গতি বাড়াতে একটি পাওয়ারহেড, এয়ারস্টোন বা অতিরিক্ত ফিল্টার যোগ করুন। এসব পদক্ষেপ আরও অক্সিজেন ট্যাঙ্কে প্রবাহিত করবে এবং মূল সমস্যার সমাধান করার জন্য কিছু সময় দেবে।

অতিরিক্ত মাছ: অতিরিক্ত মাছ রাখা অ্যাকুরিয়ামের অক্সিজেনের কমের জন্য প্রধান কারণ। ট্যাঙ্কে মাছের জন্য একটি সাধারণ নিয়ম হল প্রতি ১ বা ২ গ্যালন পানির জন্য ১ ইঞ্চি মাছ।

উচ্চ তাপমাত্রা: উচ্চ তাপমাত্রার পানি কম অক্সিজেন ধারণ করতে পারে। যদি আপনার ট্যাঙ্কের তাপমাত্রা খুব বেশি হয়, তবে হিটার কমিয়ে দিন (অথবা সাময়িকভাবে বন্ধ করুন)। ৬৫ থেকে ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের পানি পরিবর্তন করলে নতুন অক্সিজেন যুক্ত হবে এবং তাপমাত্রা নিরাপদ ভাবে কমবে। তাছাড়া, কিছু বরফের টুকরা একটি জিপ-বন্ধ ব্যাগে ট্যাঙ্কে রেখে তাপমাত্রা কমাতে পারেন, তবে নিশ্চিত করুন যে এটি মাছের জন্য আদর্শ তাপমাত্রার নিচে না নেমে।

পানি চলাচল: স্থির পানি অক্সিজেন কম রাখতে পারে, তাই  অ্যাকুরিয়ামের পানি নিয়মিত আন্দোলিত করা উচিত। ফিল্টারগুলো অক্সিজেন বাড়াতে সাহায্য করে, তাই আপনার বর্তমান ফিল্টার পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। ফিল্টার পরিষ্কার বা পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়াও, আপনি ফিল্টারের আউটলেটের ওপর একটি স্প্রে বার স্থাপন করতে পারেন বা ট্যাঙ্কে এয়ার স্টোন যোগ করতে পারেন।

ময়লা ট্যাংকঃ মাছের বর্জ্য এবং শৈবালের অতিরিক্ত বৃদ্ধি  অ্যাকুরিয়ামের অক্সিজেন শোষণ করতে পারে, কারণ ব্যাকটেরিয়া অতিরিক্ত জৈব পদার্থ ভাঙতে কাজ করে। পাথরের এবং ট্যাঙ্কের প্রাচীর থেকে ময়লা সরানোর জন্য একটি  ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা জালি ব্যাবহার করবেন যার ফলে অক্সিজেন বাড়াবে।

জীবন্ত গাছ: কখনও কখনও, জীবন্ত গাছ  অ্যাকুরিয়ামে অক্সিজেনের ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। আলোতে গাছগুলো কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) শোষণ করে এবং অক্সিজেন (O2) মুক্ত করে  দেয়। যখন ট্যাঙ্ক অন্ধকারে থাকে, তখন প্রক্রিয়াটি বিপরীত হয় এবং আপনার গাছগুলো—শৈবালসহ—অক্সিজেন ব্যবহার করে। একটি লাইট যোগ করা বা দিনের সময় আলোর সময়সীমা বাড়ানো অক্সিজেনের স্তর বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

রাসায়নিক: কিছু রাসায়নিক যা মাছের রোগ চিকিৎসা করতে বা পানির pH পরিবর্তন করতে ব্যবহৃত হয় তা অক্সিজেন স্তরকে প্রভাবিত করতে পারে। যদি আপনাকে রাসায়নিক ব্যবহারে যেতে হয়, তবে নিরাপত্তার জন্য চিকিৎসার সময় ট্যাঙ্কের পানির সঞ্চালন বাড়ান যাতে এটি যথেষ্ট অক্সিজেন বজায় রাখতে পারে।

আশাকরি উপরের সকল টিপস সঠিক ভাবে মেনে চললে আপনার মাছের জন্য অনেক উপকার হবে।