মাছের খাবার দেওয়া সত্যিই অত্যন্ত মজার। এটি আমাদের মাছের সাথে যোগাযোগ করার একটি উপায় এবং এটি মাছকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করে যাতে আমরা তাদের সাথে বন্ডীং করতে পারি। তবে, অতিরিক্ত খাবার দেওয়া শুধুমাত্র আপনার মাছের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং আপনার অ্যাকুরিয়ামের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার জন্যও ক্ষতিকর। এখানে কিছু নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে যা অব্যবহৃত খাবার আপনার একুরিয়ামে ফেলতে পারে:
- অব্যবহৃত মাছের খাবার যখন পচে যায়, তখন এটি টক্সিক অ্যামোনিয়া এবং নাইট্রাইট এসিড নিঃসরণ করে। এটি বেশ বিশেষভাবে বিপজ্জনক যদি আপনি নতুন অ্যাকুরিয়াম করে থাকেন কারণ, এখানে আপনি নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া এই টক্সিনগুলো দূর করার সুযোগ কিংবা বুঝে উঠার আগেই টক্সিক লেভেল বেড়ে যাবে। অতিরিক্ত অ্যামোনিয়া অথবা নাইট্রাইট স্তর মাছকে চাপ দেয় এবং এমনকি মেরে ফেলতে পারে। ছোট অ্যাকুরিয়ামে এই সমস্যা আরও গুরুতর, যেখানে টক্সিনগুলো দ্রুত প্রাণঘাতী স্তরে পৌঁছাতে পারে।
- পচন প্রক্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে, যা পানির দ্রবণীয় অক্সিজেনের পরিমাণ (DO) কমিয়ে দেয় এবং আপনার মাছকে চাপ দেয়। যেহেতু উচ্চ তাপমাত্রায় DO স্বাভাবিকভাবে কমে যায়, তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে থাকলে এর প্রভাব আরও গুরুতর হয়। পানি সঞ্চালনের অভাব এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
- জৈব উপাদানের ভাঙন pH কমিয়ে দেয় কারণ এটি কার্বন ডাইঅক্সাইড মুক্তি দেয়, যা পানিতে কার্বনিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। সফট ওয়াটার অ্যাকুরিয়াম বা কম বাফারিং ক্ষমতার ক্ষেত্রে, pH দ্রুত অনেক মাছের প্রজাতির জন্য নিরাপদ পরিসরের নিচে নেমে যেতে পারে, বিশেষ করে যেগুলি বেশি ক্ষারীয় বা মৌলিক অবস্থায় থাকতে পছন্দ করে।
- অব্যবহৃত খাবার আপনার ফিল্টারকে বাধা দেয়, এর দক্ষতা কমায় এবং একুরিয়ামে সঞ্চালন কমিয়ে দেয়। এর ফলে দ্রবণীয় অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, pH নিচে নেমে আসে, অ্যামোনিয়া এবং নাইট্রাইটের স্তর বাড়তে থাকে এবং সাধারণভাবে আপনার মাছের উপর চাপ পড়ে। পচে যাওয়া মাছের খাবার ছাঁচ এবং ফাঙ্গাসের জন্য একটি আবাসস্থলও তৈরি করে।
- অতিরিক্ত খাবার নাইট্রেট এবং ফসফেটের স্তর বাড়ায়, যা শৈবালের বৃদ্ধি বাড়ায়। মাছগুলো মোটা হয়ে যেতে পারে এবং এর ফলে লিভার, কিডনি এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
অ্যাকুরিয়ামের মাছের খাবার দেওয়ার সহজ টিপস সমূহ
অতিরিক্ত খাবার দেওয়া এড়াতে এবং আপনার একুরিয়ামে অব্যবহৃত খাবার জমা পড়া রোধ করতে নিচের টিপসগুলি অনুসরণ করুন:
- আপনার মাছকে এমন পরিমাণ খাবার দিন যা তারা ২ মিনিটের মধ্যে খেতে পারবে, দিনে এক বা দুইবার। এর চেয়ে বেশি দিলে খাবার সাধারণত খাওয়া হবে না। অতিরিক্ত খাবার দেওয়া মূলত খাবারের পরিমাণের উপর নির্ভর করে, প্রতি দিনে কতবার খাবার দেওয়া হচ্ছে তা নয়।
- যদি ২ মিনিট পরে আপনার মাছ এখনও ক্ষুধার্ত মনে হয়, তবে তাদের একটু বেশি খাবার দিন, তবে অ্যাকুরিয়ামের তলায় খাবার পড়ে থাকতে দেওয়া উচিত নয়। ৫ মিনিট পর অবশিষ্ট খাবার সিফন বা সূক্ষ্ম জাল মাছের জাল দিয়ে সরিয়ে ফেলুন।
- সপ্তাহে এক বা দুই দিন মাছকে খাবার না দিয়ে রাখুন।
- অ্যাকুরিয়ামের মাছের সংখ্যা এবং আকার অনুযায়ী খাবার দিন, অ্যাকুরিয়ামের আকার অনুযায়ী নয়।
- বাড়িতে বা কর্মস্থলে খাবার দেওয়ার দায়িত্ব এক ব্যক্তির ওপর সীমাবদ্ধ করুন। যদি প্রধান ব্যক্তি দূরে থাকে, তবে কাউকে পরিবর্তে দায়িত্ব দিন, তবে নিশ্চিত করুন যে তারা প্রতিটি খাওয়ানোর জন্য সঠিক পরিমাণ খাবার দেওয়ার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত।
- আপনার অ্যাকুরিয়ামের প্রচুর স্ক্যাভেঞ্জার যেমন শামুক বা চিংড়ি রাখুন, যা তলায় জমা খাবার পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।
- নতুন খাবারে পরিবর্তন করার সময় প্রথমে অল্প অল্প করে দিন, কারণ মাছ তা সাথে সাথে গ্রহণ নাও করতে পারে।
- সঠিক ধরনের খাবার সঠিক ফরম্যাটে দিন। উদাহরণস্বরূপ, উপরে খেতে অভ্যস্ত মাছ সাধারণত তলায় খাবার খুঁজবে না, এবং যদিও তলায় খাবার খাওয়া মাছ উপরে আসতে পারে, তবুও তাদের ডুবন্ত অর্থাৎ নিচে খাবার দেওয়া ভাল। বড় মাছকে ছোট খাবারের কণা বা পাত্রের তলায় জমে থাকা সূক্ষ্ম ধূলি খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। ছোট মাছের জন্য বড় ফ্লেক বা পেলেট খাবার ভেঙে দিন। মাংসাশী মাছকে প্রোটিন-ভিত্তিক খাবার এবং ভেজিটেরিয়ান মাছকে উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার দিন, যাতে অপাচ্য খাবারের কারণে অতিরিক্ত বর্জ্য সৃষ্টি না হয়।
- শুধুমাত্র সতেজ, উনতমানের খাবার দিন, কারণ আপনার মাছ পুরনো বা নিম্নমানের খাবার গ্রহণ করতে পারে না।
- আপনার অ্যাকুরিয়ামের জন্য একটু বড় ফিল্টার বেছে নিন এবং নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
- প্রতি সপ্তাহে ১০% বা প্রতি দুই সপ্তাহে ২৫% পানি পরিবর্তন করুন এবং এই প্রক্রিয়ায় তলায় হালকা ভ্যাকুয়াম করুন।
আশাকরি উপরের সকল টিপস আপনার প্রিয় মাছের যত্ন নিতে আপনাকে সহায়তা করবে।